32-bit এবং 64-bit কি? 32-bit এবং 64-bit এর মাঝে পার্থক্য কি কি?

32bit vs 64bit in bangla

আসসালামু আলাইকুম টেকজনগন, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলে ভালো আছেন। আজকের এর টপিকে আপনার সঙ্গে আলোচনা করবো উইন্ডোজ এর 32bit এবং 64bit এর মাঝে পার্থক্য নিয়ে। নরমালি আমরা জানি আমরা যখন উইন্ডোজ সেটআপ করে থাকি তখন উইন্ডোজ সিস্টেম দেখতে পাই 32 বিট এবং 64 বিট। আমরা অনেকেই জানিনা কেন শুধুমাত্র এই দুটি ভার্সনই থাকে যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমে? কেন অন্য কিছু নয়? আর কোনটি কি জন্য আমরা ইন্সটল করে থাকি? এটি এখনও আমাদের কাছে অজানা। হয়তোবা অনেকেই জানে আবার অনেকে জানেনা এটি সম্পর্কে। তাই, আজকে এই 32bit এবং 64bit এর মাঝে পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

32-bit কি?


32 বিট মূলত একটি কম্পিউটার প্রসেসর এর ধারনক্ষমতা অথবা কার্যক্ষমতা। ১৯৮৫ সালের নভেম্বরে সর্বপ্রথম মাইক্রোসফট তার নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে হাজির হয়। ধাপে ধাপে উইন্ডোজ ১.০ তারপর উইন্ডোজ ২.০ তারপর উইন্ডোজ ৩.০ এবং এরপর ১৯৯২ সালে উইন্ডোজ ৩.১ প্রথম ৩২ বিটের ডেক্সটপ ভার্সন নিয়ে আসে। সাধারণত, যে কম্পিউটারগুলো ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল এর আগে অথবা এর মাঝে তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলিতে 32bit সাপোর্ট হিসেবে করা হয়েছে। এক কথায় যে প্রসেসরগুলো Dual Core অথবা Platinum, সেগুলো 32 বিট সাপোর্টেড। 

তাই সহজেই বুঝতে পাচ্ছেন, 32 বিট এর প্রসেসিং পাওয়ার বর্তমান সময় অনুসারে অনেক কম। এখানে আমরা প্রতিটি র‍্যাম স্লটে 2 জিবি করে দুটি র‍্যাম ব্যবহার করতে পারবো। আমরা জানি যে আমরা যখন কোন একটি সফটওয়্যার বা কোন একটি ফাইল ব্রাউজ করে থাকি তখন এই যে টেম্পোরারি ফাইলগুলি থাকে, সেগুলি র‍্যামে জমা হয়ে থাকে। আর 32 বিটের অপারেটিং সিস্টেম অথবা প্রসেসরে অ্যাড্রেসিং পাওয়ার খুব সামান্য থাকে। ফলে আপনি যদি 4gb এর উপরে কোন র‍্যাম ইউজ করতে চান, সেটি পারবেন না।

এখানে আপনারা চাইলে সব সফটওয়্যার চালাতে পারবেন না, কেননা বর্তমান সময়ে যে সফটওয়্যারগুলি অথবা গেমস গুলি রিলিজ হচ্ছে সেগুলি 32bit সাপোর্টেড না। ফলে বুঝতেই পাচ্ছেন, আপনার কাজের অনেক কিছুই পাচ্ছেন না এখানে।

সকলের মনে একটি প্রশ্ন থাকতে পারে যে, যেহেতু বর্তমান সময়ে 32 বিটের কোন ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না বা তৈরি করা হচ্ছে না বা আমি বেশি রান চালাতে পারবো না তবে অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে কেন 32-bit রাখা হয়? 

এটার একটি সহজ উত্তর হচ্ছে, এখনো অনেকেই আছেন যারা পুরাতন পিসি ব্যবহার করে থাকেন (যেমন dual-core অথবা প্লাটিনাম প্রসেসর ইত্যাদি), আর তারা চাইলেও 64bit ইনস্টল করতে পারবে না। যখন ৩২ বিট প্রসেসরে ৬৪ বিট এর সফটওয়্যার ইন্সটল করতে যাবে, তখন ইন্সটল প্রসেসে বিভিন্ন এরোর শো করবে। তো বুঝতেই পাচ্ছেন ৩২ বিট কেন রাখা হচ্ছে? এই সকল ইউজারদের কথা মাথায় রেখেই এখনও ৩২ বিট বাজারে পাওয়া যায়। 

64-bit কি?


যে প্রসেসরগুলো 2003 সালের পরে তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো 64-bit সাপোর্টেড। AMD প্রথম 2003 সালে 64 বিটের চিপ নিয়ে হাজির হয়েছিল। বুঝতেই পাচ্ছেন, যত আপডেটেড প্রসেসরগুলো আছে সবগুলোই 64-bit সাপোর্টেড। এখানে যদি র‍্যাম এর ব্যাপারে বলতে চাই সেক্ষেত্রে আপনি (16 exabytes) পর্যন্ত র‍্যাম সাপোর্ট করাতে পারবেন। অর্থাৎ, 1 মিলিয়ন টেরাবাইট বা 1 বিলিয়ন গিগাবাইট। এটির প্রসেসরে অ্যাড্রেসিং পাওয়ার প্রচণ্ড উচ্চমানের থাকে। বর্তমানে যত সফটওয়্যার অথবা গেমস আসছে সবগুলি 64-bit সাপোর্টেড।

64 বিটের প্রসেসরগুলো অতিরিক্ত ডাটা পরিচালনা করতে পারে এবং এর পাশাপাশি এটির গ্রাফিক্সের কাজ করার মতন ক্ষমতা আছে। 64-bit এর গ্রাফিক্স পাওয়ার উচ্চতর, ফলে আপনি যখন কোনো কাজ করবেন তখন প্রসেস পাওয়ার অনেক বেশি পাবেন (যেমন ফটো এডিটিং বা ভিডিও এডিটিং অথবা গেইম খেলার সময় আপনি অনেক ভাল পারফরম্যান্স পাবেন)। কম্পিউটারকে কোন ধরনের হ্যাং করা ছাড়াই আপনার প্রসেসরকে ব্যবহার করতে পারবেন। কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবেন না। যারা গেমার আছেন, তারা হাই গ্রাফিক্যাল গেইম (যেমন Modern Warfare, PUBG, GTA V এমনকি ফটোশপ অথবা হাই রেঞ্জ সফটওয়্যার) সহজে ব্যবহার করতে পারবেন। কেননা, 64-bit সাপোর্টেড এই প্রসেসর হাই রেঞ্জের সফটওয়্যারগুলোর সাথে multi-tasking করে থাকে । 

32-bit vs 64-bit in bangla

32-bit এবং 64-bit এর মাঝে পার্থক্য

  1. 32-bit প্রসেসর এবং 64-bit প্রসেসর এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল, তারা প্রতি সেকেন্ডে কম্পিউটার পরিচালনায় যে ডাটা ট্রান্সফার হয় সেটি কে কত বেশি গণনা করতে পারে? এই গণনার উপরেই কম্পিউটারের পারফরম্যান্স নির্ভর করে। এই দিক দিয়ে 32 বিটের তুলনায় 64-bit অনেকটাই এগিয়ে। 
  2. ৩২ বিটের একটি কম্পিউটারে আমরা ৬৪ বিট এর লিগ্যাসি প্রোগ্রামগুলি চালাতে পারবো না। কিন্তু 32 বিটের সফটওয়্যার আমরা 64 বিটে চালাতে পারবো। 
  3. সিকিউরিটির দিকে দেখতে গেলে উভয়ই ভাইরাস অথবা ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকার হয় কিন্তু এদিক থেকে 32 বিটের তুলনায় 64 বিটের অপারেটিং সিস্টেমটি ভাইরাস আক্রমণ থেকে কম্পিউটারকে একটু বেশি সুরক্ষা দিয়ে থাকে।
  4. Processing Utility এর ক্ষেত্রে 32-bit প্রসেসর এর তুলনায় 64-bit প্রসেসর অনেক উন্নতমানের।
  5. মাইক্রোসফট এর প্রোটকল অনুসারে 64-bit অপারেটিং সিস্টেমে কোন ড্রাইভার ইন্সটল করতে হলে অবশ্যই সেই ড্রাইভারে Driver signature থাকতে হবে।
  6. 64-bit অপারেটিং সিস্টেমে 32-bit প্রসেসর এর তুলনায় উন্নতমানের multi-tasking রয়েছে।
  7. 32 বিটের অপারেটিং সিস্টেমে আপনি যদি 4GB এর উপরে কোন র‍্যাম ইউজ করতে চান, সেটি পারবেন না। কিন্তু 64-bit সাপোর্টেড অপারেটিং সিস্টেমে আপনি 17,179,869,184 GB র‍্যাম ব্যাবহার করতে পারবেন।
  8. 32 বিটের অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় 64-bit সাপোর্টেড অপারেটিং সিস্টেমে খুব ভালো পারফর্মেন্স পাওয়া যায়।
  9. 32 বিটের অপারেটিং সিস্টেমে শুধুমাত্র dual-core and quad-core version রয়েছে কিন্তু 64-bit সাপোর্টেড অপারেটিং সিস্টেমে dual-core, quad-core, six-core এবং eight-core version রয়েছে।
  10. 32 বিটের অপারেটিং সিস্টেমে শুধুমাত্র Windows 7, Windows XP, Windows Vista, Windows 8 এবং Linux সাপোর্ট করবে কিন্তু 64-bit সাপোর্টেড অপারেটিং সিস্টেমে Windows XP Professional, Windows 7, Windows 8, Windows 10, Windows 11, Windows Vista, Linux এবং Mac OS X সহ সকল সিস্টেম সাপোর্ট করবে।
  11. গ্রাফিক্স এবং সিকিউরিটির দিক থেকে 32 বিটের অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় 64-bit সাপোর্টেড অপারেটিং সিস্টেম প্রচুর গতিশীল এবং উপযোগী।
  12. বেশি স্টোরেজ অথবা বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন সফটওয়্যার ব্যাবহার করার জন্য 64-bit সাপোর্টেড অপারেটিং সিস্টেম বেষ্ট।
  13. সিস্টেমের কোর ফাইল ম্যানেজমেন্ট এর জন্য 32 বিটের অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় 64-bit সাপোর্টেড অপারেটিং সিস্টেম তুলনামুলুক বেশি এক্সিসেবল এর সুবিধা দেয়।
  14. Compatible এর দিক থেকে বিবেচনা করলে 32 বিটের অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় 64-bit সাপোর্টেড অপারেটিং সিস্টেম বেষ্ট।
  15. ভারচুয়ালাইজেশন সুবিধার দিক থেকে বিবেচনা করলে 32 বিটের অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় 64-bit সাপোর্টেড অপারেটিং সিস্টেম বেশি স্মুথ।
  16. মাইক্রোসফট থেকে সর্বশেষ রিলিজ করা Windows 11 এর জন্য অবশ্যই 64-bit সাপোর্টেড প্রসেসর ব্যাবহার করতে হবে। আপনি যদি  Windows 11 ভার্সনটি 32 বিটের প্রসেসরে ব্যাবহার করতে চান তবে সেটা ব্যাবহার করতে পারবেন না।

অবশেষে বলা যায়, প্রযুক্তি উৎকর্ষতার দিকে নজর দিলে, 32-bit প্রসেসর এর তুলনায় 64-bit প্রসেসর অনেক উন্নত এবং বেশি সুবিধা সম্বলিত। সকল দিক থেকে বিবেচনা করলে 32 বিটের অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় 64-bit সাপোর্টেড অপারেটিং সিস্টেম অনেক এগিয়ে। অতএব, আপনার জন্য 64-bit প্রসেসর একটি বেষ্ট চয়েজ। আপনি বাজারে খুব স্বল্পমূল্যে 64-bit প্রসেসর কিনতে পারবেন। তাই, 64-bit প্রসেসর ব্যাবহার করুন, ধন্যবাদ।


আরও পড়ুন;














Close Menu