Cryptocurrency কি? Cryptocurrency এর জন্ম কিভাবে হল? Birth of Cryptocurrency in Bangla
আসসালামু আলাইকুম টেকজনগণ, আজকের ব্লগে আমরা শিখবো, Cryptocurrency কি? এবং এই Cryptocurrency এর জন্ম কিভাবে হল অর্থাৎ্ Cryptocurrency আইডিয়াটা কিভাবে আসলো!! The Birth of Cryptocurrency in Bangla. তাই, এই ব্লগটি আপনি খুবই মনোযোগ সহকারে পড়ুন, আমি আশা করি আপনি আজকে অনেক কিছুই জানতে পারবেন, তো চলুন শুরু করা যাক।
Currency কি?
Cryptocurrency সম্পর্কে জানতে হলে, আপনাকে সর্ব প্রথমে জানতে হবে Currency কি? অর্থাৎ টাকা কি? এবং টাকা কিভাবে আসলো? আমি একদম প্রথম থেকে শুরু করি। শুরু করা যাক খ্রিস্টপূর্ব ৪,০০০ সালের কিছু আগে থেকে। সর্বপ্রথম আমরা মানুষেরা লেনদেনের জন্য দ্রব্য বিনিময় করতাম অর্থাৎ সরাসরি আদান-প্রদান। যেমন মনে করুন, আমার কাছে ডাল আছে এবং আপনার কাছে চাল আছে। এখন আমার ডাল খাওয়ার জন্য চালের প্রয়োজন হবে এবং আপনার চাল আপনি খেতে চাইলে ডালের প্রয়োজন হবে। তো আমি কিছু ডাল আপনাকে দিলাম আর আপনি আমাকে কিছু চাল দিলেন। বিনিময়টা প্রথমে এই ভাবেই শুরু হয়েছিল। অর্থাৎ দ্রব্য সরাসরি বিনিময় করে একজন আরেকজনের সাথে আদান-প্রদান বজায় রাখত।
এখন, এখানে খুব বড় একটি সমস্যা দেখা যায়। মনে করুন, আমার আলু দরকার কিন্তু আপনার কাছে তো আলু নেই ! তবে সেই ক্ষেত্রে সরাসরি বিনিময়টা কিভাবে হবে? আবার মনে করুন যার কাছে আলু আছে, আমি তার কাছে যাওয়ার পর, সে আমার থেকে ডালের বদলে তৈল চাইল অর্থাৎ তার ডালের দরকার নেই, তার দরকার তৈল। তো, এখন আমার কাছে তো তৈল নেই, তবে সেক্ষেত্রে আমরা বিনিময়টা কিভাবে করবো? শুধুমাত্র, এটাই একমাত্র সমস্যা না। এমন আরও অনেক রকমের সমস্যা দেখা যায়, যা সমাধান করার জন্য সরাসরি দ্রব্য বিনিময়ের মাধ্যমে আদান-প্রদান সম্ভব নয়।
মুদ্রা বিনিময় প্রথা
এরকম সকল সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন চিন্তা আসলো। বিনিময় করার জন্য কঠিন পদার্থ আদান-প্রদান করা, যেমন স্বর্ণ, রুপা ইত্যাদি। অর্থাৎ, যা সহজ ভাবে পাওয়া যায় না, মানে যা সহজলভ্য না, সেটা আদান-প্রদানের মাধ্যমে দ্রব্য বিনিময় করা। এখন এই স্বর্ণ অথবা রুপা অথবা কঠিন পদার্থের মাধ্যমে আদান-প্রদান করাও এক বিরাট সমস্যা। যেহেতু, মুদ্রা কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি, তাই এগুলো ভারী হয়ে থাকে। ভারী হওয়ার কারণে, আপনি সব জায়গায় এটা বহন করতে পারবেন না অর্থাৎ আপনার যদি অনেক মুদ্রার প্রয়োজন হয়, তবে সেক্ষেত্রে আপনি অনেক মুদ্রাসহ চলাফেরা করতে পারবেন না। এছাড়াও আরেকটা সবচেয়ে বড় সমস্যার কথা বলি, মনে করুন আপনার অল্প মূল্যের কিছু দ্রব্য দরকার, তবে সেই ক্ষেত্রে আপনি স্বর্ণ কিন্তু বাজারে বসে ছোট ছোট টুকরা করে কাটতে পারবেন না, পারবেন কি? এছাড়াও ভেবে দেখুন, স্বর্ণ দিয়ে যদি এভাবে মুদ্রা তৈরি হতে থাকে, তবে সেক্ষেত্রে একটা সময় স্বর্ণের অভাব পড়ে যাবে। সারাবিশ্বে শুধুমাত্র স্বর্ণ অথবা মুদ্রার মাধ্যমে বিনিময় করতে থাকলে, একটা সময় স্বর্ণমুদ্রা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারন, যে পরিমাণে মানুষ বৃদ্ধি পাবে, সেই পরিমাণে খনিজ সম্পদ বৃদ্ধি পাবে না। শুধুমাত্র, এটাই একমাত্র সমস্যা না। এমন আরও অনেক রকমের সমস্যা দেখা যায়, যা সমাধান করার জন্য সরাসরি স্বর্ণ অথবা রুপার মাধ্যমে আদান-প্রদান সম্ভব নয়। তো, এবার আসলো টাকা দিয়ে দ্রব্য বিনিময় করার চিন্তা।
টাকা বিনিময় প্রথা
এখন আসি, টাকা আদান প্রদানের মাধ্যমে কিভাবে এই সমস্যা গুলোর সমাধান করা যায়? মনে করুন, সরকার আপনার থেকে স্বর্ণ অথবা মুদ্রা নিয়ে নিল এবং এই কঠিন পদার্থ গুলোর বিনিময়ে আপনাকে সরকার থেকে টাকা দেয়া হলো। আপনার কাছে যে পরিমাণে স্বর্ণ অথবা মুদ্রা আছে, সেই পরিমাণের টাকা আপনাকে দেয়া হলো । সরকার টাকাগুলো মূল্য নির্ধারণ করে দিল, যা ব্যবহার করে আপনি ছোট মূল্য থেকে শুরু করলে বড় মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন এবং দ্রব্য আদান-প্রদান করতে পারবেন। এখন এখানেও অনেক সমস্যার সৃষ্টি হল, মানুষ যে হারে বৃদ্ধি পায়, সেই হিসাবে প্রচুর পরিমাণে টাকার প্রয়োজন পড়ে কিন্তু সরকারের কাছে তো সেই পরিমাণের স্বর্ণ মজুদ নেই, যেটার উপরে ভিত্তি করে আপনাকে সরকার টাকা দিবে এবং সরকার চাইলেও অগণিত টাকা ছাপাতে পারবেনা। এরকম আরো অনেক সমস্যার কারণে, স্বর্ণের বিনিময়ে টাকা প্রদান করার পদ্ধতিও পরবর্তীতে বাদ দেয়া হলো। শুরু হলো, যে কোন দেশ তার সম্পদের পরিমাণের হিসেবে তার ইচ্ছামত টাকা ছাপাতে পারবে এবং তার মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। অর্থাৎ, একেক দেশের টাকা একেক রকমের চিন্তা ভাবনার।
বর্তমানে, টাকার এই প্রচলনই চলছে। অর্থাৎ, সরকার আপনাকে কাগজের তৈরি টাকা প্রদান করবে, যার মাধ্যমে আপনি দ্রব্য বিনিময় এবং আদান-প্রদান করতে পারবেন। কিন্তু, সরকারের ভান্ডারে স্বর্ণ মজুদ করার প্রয়োজন নেই। যদি বাংলাদেশের কথা বলি, কাগজের তৈরি টাকাতে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষরকৃত সিল থাকে, তবেই সেই টাকার মূল্য আছে। যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর না থাকে, তবে সেই টাকার মূল্য শুন্য। অর্থাৎ, বাংলাদেশ ব্যাংকই নির্ধারণ করে দেয়, কোন টাকার মূল্য কত? অর্থাৎ যেকোন দেশ চাইলেই তার ইচ্ছামত টাকা ছাপাতে পারবে, এটাকে বলে ফিয়েট মানি (Fiat Money)। কিন্তু, এর মানে এই না যে, বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলেই অগণিত টাকা ছাপাতে পারবে। কারণ, টাকা ছাপানো হয় সেই দেশের সম্পদের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে। যদি অগণিত টাকা ছাপানো হয়, তবে সেই দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বহুগুণে বেড়ে যাবে। তাই, কোন দেশ চাইলেই তার ইচ্ছামত অগণিত টাকা ছাপাতে পারবে না।
এখন এইটা টাকার মাধ্যমে বিনিময়ের কারণেও অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়, আমি প্রধান দুইটি সমস্যার কথা এখানে উল্লেখ করছি। প্রথম সমস্যা, সরকার চাইলেই অগণিত টাকা ছাপাতে পারবেন যাকিনা জনগণ এবং দেশের জন্য বিশাল বিপদস্বরূপ। দ্বিতীয় সমস্যা, টাকার সম্পূর্ণ কন্ট্রোল সরকারের কাছে থাকবে এবং সরকার চাইলেই আপনার লেনদেনের তথ্য যে কারো সাথেই বিনিময় করতে পারে। যেহেতু সরকার টাকা ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্টন করে দেয় এবং টাকার সম্পূর্ণ কন্ট্রোল সরকারের কাছেই আছে, সেহেতু টাকার সাথে সরকার যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে। সরকার চাইলেই নতুন টাকা বাজারে বন্টন করতে পারবে এবং পুরাতন টাকা বন্ধ করে দিতে পারবে, এটাকে বলে ডিমনিটাইজেশন (Demonetization)। ডিমনিটাইজেশন এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ যদি বলি তবে বলা যায় ইন্ডিয়াকে। যেমন ২০১৬ সালে ইন্ডিয়াতে, ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটকে বাতিল করা হয়েছিল। সেই একইভাবে, বাংলাদেশ সরকারও যেকোন সময় যেকোন নোটকে বাতিল করতে পারে এবং নতুন নোট বাজারে বন্টন করতে পারে। এক কথায়, আমাদের সকল টাকার সম্পূর্ণ কন্ট্রোল, সরকারের হাতে। যদি আপনি ডিজিটাল মানিট্রান্সফার করেন, তবে সেইক্ষেত্রেও কিন্তু সরকারের কাছেই আমাদের সম্পূর্ণ টাকার কন্ট্রোল থেকে যায়। আপনি যদি ব্যাংকেও টাকা জমা রাখেন, তবুও আপনার টাকার উপর কিন্তু আপনার কোনো কন্ট্রোল নেই। ব্যাংক চাইলেই আপনার টাকাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করতে পারে। এমনকি, সরকার ইচ্ছা করলেই, আপনার সকল টাকা জব্দও করতে পারে অর্থাৎ আপনি যেভাবেই চিন্তা করুন না কেন, আপনার টাকার কন্ট্রোল আপনার কাছে নেই, কন্ট্রোল সম্পূর্ণ সরকারের হাতেই। এটাকে বলে, সেন্ট্রালাইজড (Centralized) । তো, এখানেই শুরু হয় Cryptocurrency এর জন্ম।
Cryptocurrency এর জন্ম (Birth of Cryptocurrency)
Cryptocurrency কি? Cryptocurrency হল, ডি-সেন্ট্রালাইজড মানি (Decentralized Money) । এটাকে অনেকে ডিজিটাল মানি (Digital Money) অথবা পিয়ার-টু-পিয়ার (peer-to-peer) ট্রানজেকশনও বলে থাকে। অর্থাৎ, একজনের সাথে অন্যজনের সরাসরি লেনদেন। এখানে তৃতীয় পক্ষের কোনো ক্ষমতা থাকেনা, অর্থাৎ আপনি তৃতীয় পক্ষের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই পৃথিবীর যে কাউকে যেকোনো পরিমাণের টাকা প্রদান করতে পারবেন এবং গ্রহণও করতে পারবেন। এই লেনদেনের সম্পূর্ণ কন্ট্রোল আপনার হাতেই থাকবে। আপনার দরকার শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযোগ, একটি Cryptocurrency আইডি এবং একটি পাসওয়ার্ড (যেন আপনি আপনার একাউন্ট সিকিউর করতে পারেন)। বাজারে বর্তমানে অনেক রকমের Cryptocurrency বিদ্যমান আছে। যেমন, বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, লাইট কয়েন, ডজ কয়েন ইত্যাদি। মূলত এখন পর্যন্ত বাজারে ১৮০০০ টিরও বেশী Cryptocurrency পাওয়া যায়। এই Cryptocurrency তে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ থাকেনা। শুধুমাত্র সরকার কেন? তৃতীয় কোনো পক্ষেরই হস্তক্ষেপ থাকেনা। Cryptocurrency বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি বিষয়। Cryptocurrency এর অনেক সুবিধা রয়েছে এবং অনেক অসুবিধাও রয়েছ, কিন্তু এই ব্লগে আমি এই সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো না। সেটা আমি অন্য কোন ব্লগে আলোচনা করবো।
বাংলাদেশে যেকোন প্রকার Cryptocurrency এর আদান-প্রদান সম্পূর্ণ অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ফরেইন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট 1947 (The Foreign Exchange Regulation Act, 1947) অনুসারে এবং মানি লন্ডারিং প্রিভিশন অ্যাক্ট 2012 (Money Laundering Prevention Act, 2012) অনুসারে, যে কোন প্রকার Cryptocurrency এর আদান প্রদান এবং ব্যবহার করা, অথবা জমা রাখা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ।
সবশেষে এই বলা যায় যে
আমি আপনাকে Cryptocurrency এর জন্ম কিভাবে হল? এবং এর ধারণা কিভাবে আসলো? সেই ইতিহাস সম্পর্কে বলার চেষ্টা করেছি মাত্র। কিন্তু, আমি আপনাকে Cryptocurrency এর জন্য অনুপ্রেরণা দেইনি। কারণ, Cryptocurrency এর অনেক অসুবিধাও হয়েছে। তাই, আমি আশা করি, আপনি আজ আমার আর্টিকেল থেকে অনেক কিছুই শিখতে পেরেছেন এবং এমন আরো অজানাকে যদি জানার ইচ্ছা থাকে ,তবে আমাকে সাপোর্ট করুন এবং আমার পাশেই থাকুন। ধন্যবাদ আপনাকে, আসসালামু আলাইকুম।
Social Plugin