কেনও Kali Linux ব্যাবহার করবেন? Kali Linux এর সুবিধা এবং অসুবিধা

kali linux in bangla

আসসালামুয়ালাইকুম টেক জনগণ, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব কেনও Kali Linux ব্যাবহার করবেন? Kali Linux এর সুবিধা এবং অসুবিধা। Kali Linux একটি বিনামূল্যের অপারেটিং সিস্টেম, যা একটি পুরানো পিসিতে নতুন জীবন শ্বাস নিতে পারে এবং এটি ইনস্টল করা এবং ব্যবহার শুরু করা আশ্চর্যজনকভাবে সহজ।

কেন Kali Linux ব্যাবহার করবেন?

আপনার পিসি কি Windows 10 এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে লড়াই করছে? আপনি কি এখনও উইন্ডোজ 7 ব্যবহার করছেন? কিন্তু, আপনি আপনার পিসির ফাইল গুলোকে আপগ্রেড করার জন্য অর্থপ্রদান করতে চান না? আপনি কি একটি দীর্ঘমেয়াদী বিকল্প খুঁজছেন? যা আধুনিক, নিরাপদ এবং এমনকি বিনামূল্যে ব্যাবহার করা যায়? তবে সেইক্ষেত্রে আপনি চাইলে Kali Linux ব্যবহার করতে পারেন, যেটা আপনার জন্য অনেক সেইফ হবে এবং বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। Kali Linux এর জন্য কোন License Key বা কোন কিছু কিনে নিতে হবে না। 

লিনাক্স এর অনেক সংস্করণ আছে, যাকে ডিস্ট্রিবিউশন বা ডিস্ট্রো বলা হয়, যেগুলিকে লিনাক্স হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। কারণ সেগুলি একই কোরের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যাকে লিনাক্স কার্নেল বলা হয়। আপনি হয়ত Ubuntu বা Mint মতো জনপ্রিয় কিছুর কথা শুনেছেন। তবে আরও অনেকগুলি পেন্টেস্টিং অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে, সেগুলির মধ্যে এক একটি একেক কাজের ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

আপনি যদি আগে কখনোই Kali Linux ব্যবহার না করে থাকেন, তাহলে আপনি নিজে নিজে এটি ব্যবহার করতে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই, লিনাক্সকে ঐতিহ্যগতভাবে অত্যন্ত অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বিশেষ টুলস হিসেবে দেখা হয়েছে।

Kali Linux এর সুবিধা

বিনামুল্যের সফটওয়্যার

Kali Linux বিনামূল্যের, কারণ এটি ওপেন সোর্স। যে কেউ এটি ডাউনলোড এবং ইনস্টল করতে পারে। তবে শুধু তাই নয়, Kali Linux থেকে বেছে নেওয়ার জন্য প্রচুর সফটওয়্যার আছে। কিছু প্রোগ্রাম উইন্ডোজেও পাওয়া যায়, যেমন GIMP ইমেজ-এডিটর বা Libre Office। অন্যগুলি শুধুমাত্র Kali Linux বা একটি নির্দিষ্ট ডিস্ট্রোর জন্য।

বিশাল কমিউনিটি

Kali Linux বড় একটি ব্যবহারকারী সংখ্যার গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, যারা প্রফেশনালি ব্যবহার করে এবং তাদের মধ্যে ডেভেলপারও রয়েছে। যাদের মধ্যে কেউ কেউ অনলাইন ফোরামের মাধ্যমে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়ে থাকে। আপনি যদি কোনো সমস্যায় পড়েন, তাহলে Kali Linux এর বিশাল কমিউনিটি আপনাকে সাহায্য করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত৷

দ্রুত এবং কম স্টোরেজ দখল করে

আমরা অনেকেই জানি যে, উইন্ডোজ এবং ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমের ব্যাকগ্রাউন্ডে বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু থাকে। যে কারণে আমাদের কম্পিউটার গুলো খুব স্লো হয়ে যায় এবং আমাদের Ram Full হয়ে যায়। যে কারণে আমাদের ব্যবহার এর সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যদি আমরা Kali Linux এর দিক থেকে দেখি, তবে এই যে ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস গুলি আছে, সেগুলি থাকে না। সেখানে অল্প কিছু পরিমাণ ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস থাকে, আপনি চাইলে সেগুলোকে ম্যানুয়ালি অফ করে দিতে পারবেন।

গোপনীয়তা

লিনাক্স ডিস্ট্রোগুলি ব্যবহারকারীর বেশি ডেটা রেকর্ড করার প্রবণতা রাখে না এবং যে ডেটাগুলি তারা রাখে সেগুলি ব্যাবহারকারীর জন্য ক্ষতিকর না। কিছু ডিস্ট্রো বিশেষভাবে অত্যন্ত গোপনীয়তার কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। তবে Mint বা Ubuntu এর মতন মূলধারার ডিস্ট্রোগুলি এখনও উল্লেখযোগ্য গোপনীয়তা সুবিধা প্রদান করে।

নিরাপত্তা

লিনাক্সের যে ডিস্ট্রোগুলি আছে, সেগুলি উইন্ডোজ এর তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ। এদের system যদি কেউ এক্সেস করতে চায় তবে সেদিক দিয়ে বলতে হবে Kali Linux অনেক বেশি সুরক্ষিত। আরেকটি কারণ হল, প্রায় অনেক লোকই উইন্ডোজ বা এমনকি ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমের বিকল্প হিসাবে লিনাক্স ব্যবহার করে না। তাই, ম্যালওয়ার মেকাররা খুব কমসংখ্যক ইউজারের সিস্টেমে এক্সপ্লইট ইন্সটল করে অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়। এই ম্যালওয়ার মেকার তৈরিকারী সংস্থাগুলির মেইন টার্গেট উইন্ডোজ এর ইউজার এবং তারা এই উইন্ডোজ ইউজারের থেকে বিভিন্ন উপায়ে অনেক বেশি অর্থ উপার্জন করে থাকে।  

আগের চেয়ে ব্যবহারে সহজ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে Kali Linux শেখার যে কোর্সগুলো এবং ডিস্ট্রিবিউটরগুলো আছে, তারা Kali Linux এর ব্যাবহারকে অনেক সহজ থেকে সহজতর করে দিয়েছে। Kali Linux এর এন্টারফেইসকে অনেক ভালো দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে এবং এর ব্যাবহারকে অনেকবেশি উপযোগী করা হয়েছে। Kali Linux-এ নতুন সফটওয়্যার ইন্সটল করার জন্য অন্যান্য ড্রাকুলার মতন ম্যানুয়ালি টেক্সট ভিত্তিক টার্মিনাল কমান্ড ইনপুট করা লাগে না। Kali Linux এর টার্মিনালকে ভিজুয়ালভিত্তিক সাজানো হয়েছে, এর কারনে Kali Linux এর টার্মিনাল ব্যাবহার করা অনেক সহজ হয়েছে। আপনি যখন লিনাক্স ডিস্ট্রো ডাউনলোড এবং ইনস্টল করেন, তখন আপনি সেগুলিকে আপনার পিসিতে সম্পূর্ণরূপে ইনস্টল না করে সরাসরি একটি USB থেকে চালাতে পারবেন।

বর্তমানে, Windows 10 সম্প্রতি লিনাক্স কার্নেলকে সমর্থন করেছে, যার অর্থ আপনি Windows 10 এর মধ্যে থেকে বেশ কয়েকটি লিনাক্স ডিস্ট্রো ইনস্টল এবং ব্যাবহার করতে পারবেন। প্রতিটি ডিস্ট্রোর এই উইন্ডোজ-বান্ধব সংস্করণগুলি মাইক্রোসফ্ট স্টোরে অ্যাপ হিসাবে পাওয়া যায়। এই Kali Linux এর টার্মিনাল সাপোর্টকে লিনাক্সের জন্য উইন্ডোজ সাবসিস্টেম (বর্তমানে WSL2) বলা হয়। কিভাবে এটি ইনস্টল করতে হবে তার নির্দেশাবলীর জন্য Microsoft এর ওয়েবসাইট দেখুন।

ডুয়াল বুটিং

Kali Linux এর অনেক ডিস্ট্রো আপনি আপনার পিসিতে উইন্ডোজের পাশাপাশি রান করতে পারবেন। যখন আপনি আপনার কম্পিউটারটিকে ওপেন করবেন তখন আপনি চাইলে উইন্ডোজ লিনাক্স সিলেক্ট করে ওপেন করতে পারবেন। উদাহরণ হিসাবে, আপনি যখন আপনার পিসি বুটআপ করেন, তখন আপনি উইন্ডোজ বা Kali Linux ব্যবহার করতে চাইলে, আপনি আপনার স্টার্টআপ কোন ডিভাইসে বুট করতে চাচ্ছেন সেটি নির্বাচন করতে পারবেন।

Kali Linux

Kali Linux ব্যবহারের অসুবিধা

সফটওয়্যার সমর্থনের অভাব

অনেক প্রোগ্রাম Kali Linux সমর্থন করে না। উদাহরণস্বরূপ, Microsoft Office এর যে সকল সফটওয়্যারগুলি আছে, সেগুলি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না। আপনি যদি সেগুলো ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য উইন্ডোজ পারফেক্ট। কিন্তু, আপনি চাইলে Microsoft office এর পরিবর্তে Libre Office ব্যবহার করতে পারবেন। এটি একটি বিনামূল্যের সফটওয়্যার, কিন্তু আপনি এখানে মাইক্রোসফট অফিসে যেরকম Feature ছিল, সেগুলো পাবেন না। এতে করে আপনার ব্রাউজ করতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে । 

আপনাকে টার্মিনাল ব্যবহার করতে শিখতে হবে

Kali Linux ব্যাবহার করার জন্য আপনাকে অবশ্যই টার্মিনাল ব্যাবহার করা শিখতে হবে। যদিও টার্মিনাল ব্যাবহার করা খুব সহজ কিন্তু প্রথমদিকে আপনাকে সেটা শিখতেই হবে। সাধারণত আমরা উইন্ডোজ ব্যাবহার করতে করতে অভ্যস্ত, তাই শুধুমাত্র ক্লিক করে করেই আমরা উইন্ডোজ ব্যাবহার করি। কিন্তু কালী লিনাক্স এই দিকে একটু ভিন্ন, তাই আপনাকে Kali Linux ব্যাবহার এর জন্য এর টার্মিনাল ব্যাবহার জানতেই হবে।

সবার কাছে তেমন একটা পরিচিত না

এখনও একটা বিশাল সংখ্যার মানুষ Kali Linux কে তাদের মেইন অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে ব্যাবহার করে না তাই Kali Linux এখনও সেই জায়গাটা দখল করতে পারেনি যা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম করেছে। Kali Linux এখনও অনেকের কাছে একটি অপরিচিত অপারেটিং সিস্টেম।


সবশেষে এটাই বলা যায়, আপনার যদি সাইবার সিকিউরিটিতে আগ্রহ থেকে থাকে তবে আপনি Kali Linux দিয়েই শুরু করতে পারেন। যখন আপনি এই Kali Linux সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন তখন আপনি আরও অন্যান্য ওপেন সোর্স প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করতে পারেন। আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি নতুন কিছু শিখেছেন তাই আমাদের সাপোর্ট করুন, ধন্যবাদ।



আরও পড়ুন;















Close Menu